যমুনা অয়েলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড (জেওসিএল) বিগত পাঁচ দশকের অধিককাল ধরে জ্বালানি তেল বিপণনের মাধ্যমে জাতিকে সেবা প্রদান করে আসছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে সর্বোত্তম ভূমিকা রাখতে এ কোম্পানি অঙ্গীকারবদ্ধ।
১৯৬৪ সালে ২ (দুই) কোটি টাকা মূলধন নিয়ে তৎকালিন পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় তেল কোম্পানি হিসেবে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেড (পিএনওএল) নামক কোম্পানিটি যাত্রা শুরম্ন করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অ্যাবানড্যান্ড প্রোপার্টি (কনট্রোল, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ডিস্পোজাল) আদেশ ১৯৭২(পিও নং ১৬, ১৯৭২) বলে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেডকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অধিগ্রহন করা হয় এবং নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েল্স লিমিটেড। অতঃপর ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে এক সরকারি আদেশ বলে এর পুনঃনামকরণ করা হয় যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড (জেওসিএল)। প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২১-৪-৭৩ তারিখে ২১ এম-৪/৭৬ (এন আর) বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ কোম্পানি পেট্রোবাংলার আওতাধীন একটি এডহক কমিটি (অয়েল কোম্পানিজ এডভাইজারী কমিটি) দ্বারা পরিচালিত হতো। ১৯৭৫ সলের ১২ মার্চ কোম্পানি আইন ১৯১৩ (সংশোধিত ১৯৯৪) এর অধীনে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস এ নিবন্ধিত হয়, যার অনুমোদিত মূলধন ১০ (দশ) কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালের বিপিসি অধ্যাদেশ নং LXXXVIII (যা ১৩ নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে বাংলাদেশ গেজেট এক্সট্রা-অর্ডিনারীতে প্রকাশিত হয়) এর ৩১(সি) ধারায় বর্ণিত তালিকায় এ কোম্পানির সম্পত্তি ও দায়-দেনা সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর নিকট হসত্মামত্মর করা হয়। এছাড়া ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে ইন্দোবার্মা পেট্রোলিয়াম কোম্পানী লিমিটেড (আইবিপিসিএল) এর সমসত্ম বিষয় সম্পত্তি ও দায়-দেনা এ কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন গঠনের পর থেকে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের একটি সাবসিডিয়ারি হিসেবে কাজ করে আসছে।
২০০৫-২০০৬ অর্থ বৎসরের মুনাফা থেকে ৫.০০ কোটি টাকা বোনাস শেয়ার ইস্যু করে এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১০.০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। গত ২৫ জুন, ২০০৭ তারিখে এ কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপামত্মরিত করা হয় এবং এর অনুমোদিত মূলধন ৩০০.০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ১০-৮-২০০৭ তারিখে পুনরায় ৩৫.০০ কোটি টাকার বোনাস শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন ৪৫.০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন তাদের মালিকানাধীন শেয়ার থেকে প্রতিটি ১০.০০ টাকা মূল্যের ১,৩৫,০০,০০০ টি সাধারণ শেয়ার অর্থাৎ; ১৩.৫০ কোটি টাকার শেয়ার ডাইরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতির আওতায় অফ-লোড এর লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এ ০৯-০১-২০০৮ তারিখে তালিকাভূক্ত হয় এবং যথারীতি উপরোক্ত শেয়ার পুঁজিবাজারে অফ-লোড করা হয়। পরবর্তীতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট শেয়ার থেকে আরও ১৭ শতাংশ শেয়ার ২৫-৭-২০১১ তারিখে অফ-লোড করা হয়।
বিভিন্ন অর্থ বৎসরে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনক্রমে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ১১০.৪২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়, যা প্রতিটি ১০ টাকার মূল্যের ১১,০৪,২৪,৬০০টি শেয়ারে বিভক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা যথাক্রমে ৬০.০৮% ও ৩৯.৯২%।
এ ছাড়াও জেওসিএল বাংলাদেশে বিশ্বমানের মবিল ব্রান্ডের লুব্রিক্যান্ট এবং গ্রীজ বাজারজাত করে থাকে। এছাড়া নিজস্ব যমুনা ব্রান্ডের লুব অয়েলও বাজারজাত করে। কোম্পানির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে অবস্থিত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪টি বিভাগীয় অফিস এবং ৫টি আঞ্চলিক বিক্রয় অফিস রয়েছে।
কোম্পানির প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে অবস্থিত এবং সারা দেশে ১৬ টি ডিপো রয়েছে। এছাড়াও জেওসিএল এর বিদ্যমান ৭৪২ টি ডিলার, ৯৫৪ টি ডিস্ট্রিবিউটর, ২৭৪ টি প্যাকড পয়েন্ট ডিলার, ৭৭২ টি এলপিজি ডিলার এবং ১৯ টি মেরিন ডিলার দ্বারা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের নিকট পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদান করে থাকে।
কোম্পানি পরিচালনার জন্য বর্তমানে দশ(১০) সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালকসহ ৯ (জন) পরিচালক সরকার কর্তৃক মনোনীত এবং ১ (জন) পরিচালক সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে নির্বাচিত। কোম্পানির সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদনক্রমে সম্পাদিত হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার নীতিনির্ধারক হিসেবে কাজ করে, যা বিপিসি এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়।